এই মঞ্জু ভাইয়ের কাজ ছাড়া পূজা মণ্ডপ যেন তৈরিই হয় না। সবাই চায় মঞ্জু ভাই ওদের মণ্ডপে কাজ করুক। আর মঞ্জু ভাইয়ও হয়েছে একটা মানুষ, আটটা দশটা মণ্ডপের কাজ নিয়ে পূজার কয়টা দিন পাগলের মত ঘুরে। আমি একবার জিজ্ঞাস করেছিলাম, খুব কামাচ্ছেন? উনি হাসি দিয়ে বললেন, আরে নাহ, টাকার জন্য না, ধর্মীয় কাজে টাকার হিসাব করলে চলে!! পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, আসলেই তাই। যে মঞ্জু ভাই কে বিয়ের প্রোগ্রামের জন্য দেন দরবার করে পেতে হয় আমাদের সবার, সেই মঞ্জু ভাই অনায়াসে সকলের সাথেই আছে, টাকা পয়সাও যে যত যখন পারছে দিচ্ছে। মঞ্জু ভাইদের জন্যই এখনো দেশ নিয়ে আশা করতে পারি। খাদ থেকে হয়ত বেঁচেও যেতে পারি আমরা। ... ...
১৯৪৮ সালে বার্মা আবার বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। রোহিঙ্গারাও এই স্বাধীনতা আন্দোলনে জেনারেল অং সানকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু বর্মীবাহিনীর মধ্যে থেকে যায় সেই পুরনো ক্ষোভ―রোহিঙ্গারা একদা বৃটিশদের সর্বাত্মকভাবে সমর্থন দিয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সাময়িকভাবে মগ-রোহিঙ্গা দূরত্ব কমে এলেও স্বাধীনতার পর উভয়পক্ষের মধ্যে আবার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দূরত্বের কারণ সেই পুরনো ক্ষোভ। ১৯৪৭ সালে নতুন শাসনতন্ত্রিক পরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রণীত ভোটার তালিকায় আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদগুলোকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে আবারও শুরু হয় সংঘাত। ১৯৪৮ সালে আবারও রোহিঙ্গারা হত্যাকা-ের শিকার হয়। ... ...
...রোহিঙ্গারা কিন্তু আরাকানের আদিম জনগোষ্ঠী নয়। খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে মারু ও কামরাজগজি বংশ স্বাধীনভাবে আরাকান শাসন করে। ১৪৬ বা ১৫১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মগধ থেকে আগত চন্দ্র-সূর্য নামক এক সামন্ত সৈন্যবাহিনী চট্টগ্রাম ও আরাকানে বসবাসকারী আদিম জাতির সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করে সেখানে নতুন রাজ্যের গোড়া পত্তন করে। মগধ থেকে আগত হিন্দু ও বৌদ্ধ সেনারা নতুন রাজ্যের আদিম অধিবাসীদের আর্য ধর্ম-দর্শন-সংস্কৃতি ও ভাষালিপিতে শিক্ষিত করে তোলে। কালক্রমে চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্ম-সংস্কৃতি এবং আরাকানে বৌদ্ধধর্ম সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়। ... ...
৭১ এ যে নারীরা ধর্ষিত হয়েছিল তারা তো সম্মান হারায় নি বরং তারাই সম্মানিত, তারাই আমাদের গর্বের প্রতীক। তারা বীর। এই বীরদের ইজ্জৎ হারানো নারী উপস্থাপন করে তাদের কি অসম্মানিত করা হচ্ছে না? ইজ্জৎ তৈরি হয়, মেধায় শ্রমে, মানুষের কর্মে। শরীরে কিংবা মনে আঘাত লাগলে কারও ইজ্জৎ যায় না । বরং ইজ্জৎ যাবে আঘাতকারীর । তার জঘন্য কর্মের জন্য সে সমাজে বেইজ্জত হবে। তাই প্রতিটা পাকি ধর্ষকদের ইজ্জৎ গেছে। এইগুলাই ইজ্জৎ হারানো নষ্ট, ভ্রষ্ট অমানুষ। ... ...
১,১০০ জনে্র মৃত্যুর মিছিল, ধসে পড়া ভবনের ধ্বংস স্তুপের মধ্যে চাপা পড়া হাজার হাজার মানুষের বাঁচার হাহাকার, এরই মধ্যে নতুন দুটি প্রাণের জন্ম-মৃত্যু, হাজার নিখোঁজ আপন জনদের খোঁজে স্বজনদের আহাজারি, টানা সাত-আট দিন ধরে জীবন মৃত্যুর মধ্যখানে পতিত এইসব মানুষের প্রাণ বাঁচাতে শত শত মানুষের প্রাণান্তকর লড়াই এবং শেষ পর্যন্ত আড়াই হাজার মানুষকে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার মানবিক জয় বাংলাদশে এক দুঃসহ-মর্মান্তিক স্মৃতি হিসেবে জিয়ে থাকবে বহুদিন। ... ...
“মেয়ে প্রতিবাদ করো”, “মেয়ে তোমার শরীর ট্যাবু নয়”, “সাহস করে ঘুরে দাঁড়াও” এরকম অসংখ্য ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়েছিল মেয়েরা। আর পাঁচ বছর আগেও এটা দেখা যেত না। সম্প্রতি বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে বিশেষ আইনে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। এতে নারীর উন্নতি আরও কয়েক ধাপ পিছিয়ে যাবে, সঙ্গে অল্প বয়সে মা হওয়া মেয়ের সংখ্যা বাড়বে। নারীর জরায়ু বরাবরের মতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ফেস্টুনে ছিল এই নিয়েও প্রতিবাদ। আর পাঁচ বছর আগে একত্রে এত মেয়ে নিজের প্রতিবাদের কথা বলছে এটা ভাবা যেত না। তাই পত্রিকায় আসুক আর না আসুক, টিভিতে কেউ দেখুক না দেখুক, সেলিব্রেটি সমাগম হোক আর না হোক বাংলাদেশের প্রথম এই উইমেন মার্চ ইতিহাস হয়ে থাকবে। ... ...
জিহাদীদের সিরিজ খুনের চাপাতির কোপ "নাস্তিক ব্লগার" এর পরিধি ছাড়িয়ে শিগগিরই বিদেশি, ভিন্ন ধর্মালম্বী, অধ্যাপক, হোমিও চিকিৎসক, সমকামী, এমনকি মসজিদের ইমাম, শিয়া ও পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে শেষমেষ সরকার কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে অভিযানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃংখলা বাহিনী। অভিযানে ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী-জঙ্গি। অবশ্য আমরা মুক্তমনারা আগেই সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলাম, ব্লগার খুন হচ্ছে জিহাদের সূচনা মাত্র; খেলাফত, তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খোয়াবে মশগুল মুজাহিদরা শিগগিরই হত্যার পরিধি বিস্তৃত করবে। রাষ্ট্র দখল করাই যেহেতু তাদের লক্ষ্য, তাই তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর আঘাত হানবে শিগগিরই। আর সরকারি উদাসিনতায়, বলা ভালো, জিহাদীদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের হত্যাযজ্ঞ দেশজুড়ে ছড়াতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ... ...
তো, আমারো কি এখন থেকে পরিবারের কথা মেনে সাবধান হওয়া উচিৎ? আমাকে কতল কাল কখন, কোথায় হবে? ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার সময় রাতের বেলা গলির মুখে কি ঘাপটি মেরে থাকবে কোনো মৌলবাদের নাতি? নাকি সকাল, সকালই নূরানী লেবাসের চাপাতিতন্ত্র বাসার সামনে ঝাপিয়েঁ পড়বে আমার ওপর? অথবা তারা আমার শোবার ঘরেই সদলবলে ঢুকে কুপিয়ে জিহাদ কায়েম করে গেল, এমনো তো হতে পারে? তারা আমার গলা কাটার আগে আমি কি তাদের মুখগুলো একনজর দেখার সময় পাবো? আর অনিবার্য প্রশ্ন এই, তখন কি হবে আমার অনুভূতি? ... ...
বাবা একদিন মরে পরে রইলেন চেয়ার মধ্যে। যে কাঠের চেয়ারটায় রোজ বসে থাকতেন বারান্দা, একদিন দেখা গেলো মাথাটা হেলে আছে চেয়ারের কাধে, মুখ দিয়ে ফেনা গড়াচ্ছে…। খুব বড় আয়োজন করে বাবার কুলখানি করলেন বড় ভাই। আমাদের ডালডা আর তেলের কারখানাটা বড় ভাইই চালান। ভাবী আমাদের এখানে থাকতে চান না বলে উত্তরায় ফ্ল্যাট কিনে ভাই-ভাবী সেখানেই থাকেন। এই বাড়িতে এখন আমি একা। পুরো একটা বাড়িতে একা থাকতে আমার একটুও একা লাগে না। কেন লাগে না জানি না। স্বপন যে ঘরটাতে ফাঁস দিয়েছিল সেঘরটা তালা দেয়া থাকে। মাঝে মাঝে খুলে ভেতরে ঢুকি। চেষ্টা করি স্বপনের কোন অস্তিত্ব অনুভব করতে। আজ ২২ বছর স্বপন নেই! মণীশ জ্যাঠার যেমন বয়স আটকে আছে মহাকালের ফ্রেমে, স্বপনও সদ্য যৌবনের চেহারা নিয়ে এ্যালবামে আটকে আছে। কি অদ্ভূত, মণীশ জ্যাঠা এ বাড়ির মায়া আজো কাটাতে পারলেন না কিন্তু স্বপনকে কতদিন প্রত্যাশা করেছি শুধু একবার দেখবো…। কিন্তু স্বপন যে দূর কোন দেশের অধিবাসী। স্বপন চলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি…। ... ...
আজকের বিশ্বে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত লেখালেখি হয়, যতখানি ভাবতে হচ্ছে, সেমিনার, সম্মেলন, গবেষণা করে জানতে চাওয়া হচ্ছে ইসলামকে কিভাবে উগ্রতা থেকে উদার ও সহনশীল করে তরুণ-যুবাদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়- তার এক পার্সেন্টও অন্য কোন ধর্মকে নিয়ে করার প্রয়োজন পড়েনি। ইসলাম ধর্মের উদারপন্থি যেমন আছে তেমনি কট্টরপন্থিও আছে। অন্য ধর্মেও এরকম বিভক্তি দেখা যায়। তবে তারা একে অপরকে “অখ্রিস্টান” বা “অহিন্দু” টাইপ কিছু ঘোষণা করেন না। একে অপরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রক্তাক্ত করেন না। ইসলামে এটা নিত্য সহা এক সত্য। রোজ এক দল নিজেদেরকে প্রকৃত ইসলাম অনুসারী ও বিপক্ষকে ইসলাম থেকে খারিজ বলে দাবী করেন। ইসলামের হাজারো পন্থির সকলের একই কুরআন, একজনই নবী মুহাম্মদ, প্রত্যেক পন্থিদেরই আল্লামা, শাইখুল হাদিস আছেন। তারা আপনাকে কুরআন থেকে দেখিয়ে দিবেন একমাত্র তারাই প্রকৃত মুসলমান ও ইসলাম অনুসারী। নবী মুহাম্মদকে তারাই অক্ষরে অক্ষেরে পালন করেন। আপনার আমার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যে আপনি আমি একজন মুসলমান হিসেবে কাদের খপ্পরে পড়বো সেটা নির্ভর করে সেই অঞ্চলে কারা ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন তাদের উপর। ... ...
তাহলে কী নিয়ে লিখবো আমি! কেউ কি বলতে পারবেন কী নিয়ে লিখতে সরকার, রাজনৈতিক দল, মৌলবাদী, জনগণ, স্বাধীনতা পক্ষ-বিপক্ষ সব গোষ্ঠী শান্ত থাকবে? আছেন কি কেউ বুদ্ধি দেওয়ার মতো? হ্যালো... ... ...
চাপাতিধারীদের অতর্কিত হামলা আতঙ্কের যে সমাজে আমাদের বসবাস, তাতে নবতর সংযোজন এই ব্লগার খুন। যে গভীর পাপ আমাদের মানহীন শিক্ষাব্যবস্থায়, আমলাতন্ত্রের দাপটে, সংস্কৃতি চর্চায়, সামাজিক সংগঠনের ভূমিকাহীনতায়, দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতায়য় এত বছর ধরে চর্চা করে আসা হয়েছে, তার ফলাফল হাতেহাতে পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞান লেখকদের আড্ডা কি আর হবে এই দেশে? আইনস্টাইনের জন্মদিন পরের বছর কি পালন করা যাবে? শিশু-কিশোরদের মা বাবারা পাঠাবেন তো সাংস্কৃতিক আয়োজনে? সবশেষ ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ড (৩০ মার্চ) এই ভীতির সংস্কৃতিকে আরও পাকাপোক্ত করার শয়তানি আযোজন। আমরা জানি যারা আসছে, সেই নতুন প্রজন্মের জন্যই আমাদের লড়ে যেতে হবে। সহিষ্ণু-মানবিক একটা সমাজ নির্মাণের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ চলবে। ... ...
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এবং তাদের পরিবেশ জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সিকিমবাসী আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। পশ্চিম বাংলা, আসামেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, পরিবেশবাদী সংগঠন ক্ষতিকর এসব বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে। গনসংহতি আন্দোলন সহ বাংলাদেশের বাম মোর্চা গত ৮ থেকে ১০ এপ্রিল ২০১৪ তিস্তার পানির দাবিতে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট দোয়ানি পর্যন্ত রোড মার্চ করেছে। যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল তিস্তা নিয়ে উদ্ভুত এই সমস্যা একা বাংলাদেশের মরুকরণ বা খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা নয়, কিংবা পশ্চিম বাংলার উন্নয়নের সমস্যা নয়। অথবা এককভাবে তা সিকিমের আদিবাসী, সাধারন মানুষদের জীবন, জীবিকা, ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার সংগ্রামও হতে পারেনা। ক্ষতিগ্রস্ত আমরা সবাই। ফলে বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণের এই সংগ্রাম সিকিম, পশ্চিম বাংলা, বাংলাদেশ সহ সকলের। ... ...
কিন্তু শাহবাগে যে স্বতঃস্ফুর্ত গণজাগরণ হয়েছে তা তো কোনো দলের নয়, কোনো একটি পত্রিকার নয়; গোটা দেশের। সারা বিশ্বের সকল বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে শাহবাগের ডাক। মতি ভাই ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণআন্দোলনের মাঠের সৈনিক। কিন্তু ২০১৩-এর গণজাগরণে তাকে এক সেকেন্ডের জন্যও দেখি নি। কেন? এমন তো নয় মতি ভাইয়ের অনেক বয়স হয়ে গেছে, কোথাও যান না। বরং পত্রিকার স্বার্থে অনেক অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও তাকে যেতে দেখি। মতি ভাইদের গণঅভ্যুত্থান অনেক মহৎ ছিল। গণঅভ্যুত্থানের বছর জন্ম বলে আমি অনেক গর্ব করি। কিন্তু তাই বলে আমাদের নতুন প্রজন্মের গণজাগরণের মহত্বও তো কম নয়, অন্তত মতি ভাইয়ের না যাওয়ার মতো অত খারাপ না। ... ...
শাহবাগ জনতার সেই চেতনা, যে-চেতনা অনুমান করেছিলো জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের কোন আঁতাত তৈরি হয়েছে। ট্রাইবুন্যাল-রূপী প্রহসনের নাটকে জনগণের দাবীর যে অপমান ঘটেছে শাহাবাগ তারই বহিঃপ্রকাশ। শাহবাগ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু শাহবাগে আওয়ামী লীগ একটা নেতৃত্বকে চাপিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি বাকিদেরও সন্দ্বিগ্ধতার কারণে এরাও আবার একক নেতৃত্ব হতে পারেনি, কিছুটা হলেও যৌথ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছিলো। বাকিরা যেহেতু সংগঠিত ছিলো না, তাই চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্বের অগণতান্ত্রিকতা আর অস্বচ্ছতাও যথাসময়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নীতিনির্ধারণী সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তও বদলে ফেলার মত গুরুতর ঘটনা শাহবাগে ঘটেছে। আবার, নেতৃত্বের যে কোন আপোষের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র সাধারণ জনতা ও কর্মীরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাও নেতৃত্বের ভূমিকাকে বহুভাবে প্রভাবিত করেছে। ... ...
সাত কি আট শতাব্দীর যে লিগ্যাসি আজ ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ-বরিশালের রাস্তায় আগুন হয়ে জ্বলছে, সেই অগ্নি নির্বাপণের সদুত্তর আমাদের কারো কাছেই নেই। বাঙালীর প্রদোষকাল আজো শেষ হয় নি। শওকত আলী আমাদের সেই মহত্তম লেখকদের একজন যিনি শ্যামাঙ্গ ও লীলাবতীর এই সংলাপের ভেতর দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্ম-পরিচয়ের সঙ্কট তুলে ধরেছেন। এই বই দুই বাংলার বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলিম উভয়ের অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ। বাঙালী মুসলিমের যে অংশ আজ এদেশকে আফগানিস্থান বানানোর স্বপ্নে দিশাহারা, তাকে পড়তে হবে আত্ম-পরিচয়ের প্রশ্নে। যে বাঙালী হিন্দু ওপারে গিয়ে সর্বভারতীয় আশ্রয়ে কোনমতে মাথা গুঁজে আত্মতৃপ্ত হয়ে ভাবছেন, ‘যাক, ওপারের মুসলিম গুন্ডাদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচেছি’ তারও এই বই পাঠ জরুরি আত্ম-বিশ্লেষণ ও আত্মশুদ্ধির জন্য। দু’জনকেই দু’জনের সঙ্কট-সমস্যা বুঝতে হবে। তবেই মিলতে পারবে শ্যামাঙ্গ আর লীলাবতীর ধর্মান্তরিত ও অ-ধর্মান্তরিত সন্তানরা। কারণ মা প্রকৃতি ত’ আমাদের চেহারায় এমন ছাপ দিয়েইছেন যা কিছুতেই মালা-দাড়ি, তিলক-টুপিতে ঢাকার যো নেই। ... ...
অনন্তর,পরিশেষে বলা জরুরি,ভৌগলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য এই যে,বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহে সাম্প্রদায়িক সংকট যথেষ্ট প্রকট। অন্তত এই বিবেচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু এর অবনতি ঘটিয়ে যারা ফায়দা হাসিলে সচেষ্ট তারাই যে এই সাম্প্রদায়িক অপরাধটি সংঘটিত করেছে তা বুঝতে বাড়তি কোনো বিদ্যেবুদ্ধি কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিজীবি হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। এটা সত্যি যে,রামুতে কতিপয় মুসলিম সন্ত্রাসির নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও হামলা হয়েছে নোয়াখালির দাঙ্গার পর সন্দেহ নেই এটিই সবচে' বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ধর্মান্ধ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দিয়ে সুকৌশলে যারা এই সাম্প্রদায়িক অপরাধ সংঘটনে পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করেছে অবশ্যই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইতোমধ্যে রামু নিয়েও শুরু হয়েছে পরস্পর দোষারোপের সেই নোংরা রাজনীতি। তবে কি অচিরেই আমরা রামুর এই সহিংস ঘটনাটিকেও বিস্মৃতির অতলেই হারিয়ে যেতে দেখবো? আর সেটি কি আদৌ আমাদের জন্যে মঙ্গলজনক হবে? আর কতকাল সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিশেবে বিবেচিত হবে? সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক রাজনীতিকরা স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধিতে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা জংগিবাদের ধুয়ো তুলে খাল কেটে কি কুমিরকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে যাবে? এদেশের অসাম্প্রদায়িক প্রকৃত মুসলিমদের কি কিছুই করণীয় নেই? তারা কি শুধুই হাত গুটিয়ে বসে বসে দেখবে আর ইসলামের মহত্বই প্রচার করে যাবে? একজন নির্যাতিত বাংলাদেশি বৌদ্ধের তুলনায় একজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা কিংবা ফিলিস্তিনি মুসলিমের প্রতি এদেশীয় ধর্মপ্রাণ মানুষের মমতা কি আসলেই বেশি? হ্যাঁ,এইসব,সবকিছুই বিবেচনাপূর্বক রামু ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু সমাধানকল্পে একটি স্বচ্ছ বিচারবিভাগীয় তদন্ত এই মুহূর্তে সত্যিই ভীষণ জরুরি। তা না হলে যে সভ্যতার পোড়াঘ্রাণে বারম্বারই অসহ হয়ে উঠবে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাই নয় কি? ... ...
শাহবাগের মোড়– প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনটি একটি বারুদের স্তুপে স্ফুলিংগ সংযোগ সূচনায় গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন । সেখান থেকে গণজাগরণ, গণ বিস্ফোরণটি ঘটে। প্রথমদিকে আন্দোলনটি শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তরুণদের আহ্বানে খুব শিগগিরই এতে ব্যপক সাড়া মেলে; কারণ সচেতন নাগরিকরা কাদের মোল্লার মতো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, শীর্ষ জামাত নেতার শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় মেনে নিতে পারেননি। তরুণরা এই আন্দোলনটিতে পথ দেখালেও শিগগিরই ছাত্র-জনতা সকলেই এতে যোগ দেন; দেশের জেলা শহরগুলোতে তো বটেই, এমনকি উপজেলা পর্যায়েও গণদাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। জনমত তৈরি হয়, শুধু কাদের মোল্লা নয়, সব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি –ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনটি দানা বাঁধে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী, বাঙালি ও সমমনারাও খুব শিগগিরই ১৯৭১ এর মানবতা বিরোধী অপরাধ বিরোধী আন্দোলনটির সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করতে থাকেন। এই নয়া বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ হয়ে শাহবাগের চেতনা ছড়াতে থাকে দেশে দেশে। ... ...
যারা বোরো রাজনীতির হাল হকিকৎ সম্বন্ধ ওয়াকিবহাল আছেন তারা সবাই জানেন কী ভয়ানক রক্তক্ষয়ী ও হিংস্র ছিলো এই রাজনীতি। বহু মধ্যপন্থী বোরো নেতাকে সরাসরি মেরে ফেলা হয়। বোরোলিবারেশন টাইগার(বিটিএল), (যেটির নেতৃত্বে ছিলেন এই মোহিলারিই, পরে অব্শ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়ে দেন)। বা আগেকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বোরোল্যান্ড(এন ডি এফ বি) - এই দুই দলের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে বহুজন হতাহত হন। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অবাধ জোগান এইসব আন্দোলনকে খুব সহজেই হিংসাত্মক করে তুলেছিল। এই হিংসা ও খুনোখুনির রাজনীতি বহুদিন ধরেই এই অঞ্চলে চলে আসছে, এমন নয় যে শুধু "অনুপ্রবেশকারী"দের সাথেই প্রথম এখানে হিংসার রাজনীতি পা রাখল। ... ...
না, আমার, আমাদের, মানে অফিসিয়ালি 'আসাম'এর বাঙালিদের, ব্যাঙ্গালোরে আপাতত বিপদ নেই। আমরা 'মিড্ল্ ক্লাস', আমরা টিঁকে যাবো। আমরা নিরাপদে বসে বড় বড় জাতীয় সংহতির বুলিও দেবো। ফ্ল্যাট্ করবো বেঙ্গালোর নইলে কলকাতায়। ...কিন্তু যারা তা নয়, যারা এই দেশের ৯৯ ভাগ, যারা অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত তারা বাঁচবে কীভাবে? আজ না হোক কাল টিঁকে থাকার জন্য হয় তাদের বলতে হবে 'আম্গো বাসা কইলকাত্তা' ... আর নাহলে আসামে থাকলে, মুখে কিংবা কায়দায় 'আম্গো ভাহা অহইম্মা' বলে, ভূপেন হাজারিকাকে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বলে সালাম ঠুকে 'অহইম্মা' হয়ে। ... ...